আলুর সাধারণ রোগ ও প্রতিকার
আলুর সাধারণ রোগ ও প্রতিকার
আলু চাষে রোগ-বালাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলে ফসলের ক্ষতি কমিয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আলু চাষে যেসব রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার বিস্তারিত বিবরণ ও সমাধান নিচে দেওয়া হলো:
১. আলুর লেট ব্লাইট (Late Blight)
কারণ: Phytophthora infestans নামক ছত্রাক।
লক্ষণ:
পাতায় গাঢ় সবুজ বা বাদামি দাগ হয়, যা সাদা পাউডারে ঢেকে যায়।
কন্দে (আলু) গাঢ় বাদামি দাগ ও পচন ধরে।
প্রতিকার:
ছত্রাকনাশক স্প্রে (যেমন: ম্যানকোজেব, সিমক্সানিল) ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলুন।
রোগ প্রতিরোধী জাত (যেমন: কার্ডিনাল) চাষ করুন।
২. আর্লি ব্লাইট (Early Blight)
কারণ: Alternaria solani ছত্রাক।
লক্ষণ:
পাতায় গোলাকার বাদামি দাগ, যার চারপাশে হলুদ বলয় দেখা যায়।
দাগ বড় হয়ে পাতার মৃত্যু ঘটায়।
প্রতিকার:
ক্লোরোথালোনিল বা কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন।
ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলুন।
৩. ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট (Bacterial Wilt)
কারণ: Ralstonia solanacearum ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষণ:
গাছ হঠাৎ নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে যায়।
কন্দ কাটলে সাদা আঠালো তরল বের হয়।
প্রতিকার:
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলুন।
জমিতে জলাবদ্ধতা এড়ান।
স্বাস্থ্যকর বীজ ব্যবহার করুন।
৪. ব্ল্যাকলেগ (Blackleg)
কারণ: Pectobacterium atrosepticum ব্যাকটেরিয়া।
লক্ষণ:
গাছের গোড়া কালো হয়ে পচে যায়।
কন্দে গভীর কালো দাগ ও গন্ধ হয়।
প্রতিকার:
বীজ আলু বোর্ডো মিশ্রণ দিয়ে শোধন করুন।
জমিতে অতিরিক্ত সেচ দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
৫. ভাইরাসজনিত রোগ (PVY, PLRV)
কারণ: পটেটো ভাইরাস Y (PVY) ও পটেটো লিফ রোল ভাইরাস (PLRV)।
লক্ষণ:
পাতা কুঁচকে যায় বা হলুদ হয়ে যায়।
গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও ফলন হ্রাস পায়।
প্রতিকার:
ভাইরাসমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন।
এফিড (মাহো পোকা) দমন করুন (ইমিডাক্লোপ্রিড স্প্রে)।
রোগ প্রতিরোধের সাধারণ টিপস
বীজ শোধন করে রোপণ করুন।
ফসল ঘূর্ণন (Crop Rotation) মেনে চলুন।
জমি পরিষ্কার রাখুন ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শ নিন।
আলুর রোগ সম্পর্কে FAQs
১. আলুর সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ কোনটি?
উত্তর: লেট ব্লাইট সবচেয়ে ক্ষতিকর, কারণ এটি দ্রুত ছড়ায় এবং পুরো ফসল নষ্ট করতে পারে।
২. জৈব পদ্ধতিতে রোগ দমন সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ! নিমের তেল, Trichoderma ছত্রাক, বা গোবর সার ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৩. বীজ শোধনের সেরা পদ্ধতি কী?
উত্তর: বীজ আলু বোর্ডো মিশ্রণ (১%) বা গরম পানিতে (৫০°C তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট) ডুবিয়ে শোধন করুন।
৪. আক্রান্ত আলু খাওয়া যায় কি?
উত্তর: ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট বা ব্ল্যাকলেগে আক্রান্ত আলু বিষাক্ত হতে পারে। এড়িয়ে চলুন।
৫. আলু চাষে জৈব সার কীভাবে উপকারী?
উত্তর: জৈব সার মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সতর্কতা: আলুর রোগ দমনে রাসায়নিক ব্যবহারের সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন এবং মাত্রা অনুযায়ী স্প্রে করুন।